নিয়ত কতটা পাওয়ারফুল একবার ভেবে দেখেন!!!
.
(ঘটনা নং- ১)
আসাদ সাহেবের মা চেয়েছিল ছেলেকে সুন্দরী বউ এনে দিবে সাথে ঘর ভর্তি ফার্নিচার নিবে মেয়ের পরিবার থেকে।কারণ যদি কখনো ছেলের সামর্থ্য না হয় ঘর ভর্তি ফার্নিচার কেনার।
.
সত্যি সত্যি ছেলের জন্য সুন্দরী বউ আর বউ এর পরিবার থেকে ঘর ভর্তি ফার্নিচার তিনি ঠিক-ই এনেছেন কিন্তু যে ঘর সাজাতে এতকিছুর আয়োজন সে ঘর গ্যাস লিক হয়ে আগুনে জ্বলে-পুড়ে গেছে।
.
.
(ঘটনা নং-২)
রফিক সাহেব একজন সরকারি কর্মকর্তা। ১৮ লাখ টাকা পেনশন পেয়েছেন। সম্পূর্ণ টাকা ব্যাংকে রেখেছেন যাতে ভবিষ্যতে রোগ ব্যাধি হলে যেন ডাঃ দেখাতে পারেন।ও হ্যাঁ মাস শেষে ১৮ হাজার তুলতে উনি কখনো ভুলেন না!
মাত্র ৪ বছরের মাথায় উনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন।
.
.
(ঘটনা নং -৩)
আফসানা নিজের পায়ে না দাঁড়ানো পর্যন্ত নাকি বিয়েই করবে না। স্বামীর টাকায় নাকি সে চলবে না।
৪০ বছর হয়ে গেল মেয়েটার এখনো বিয়েই হলো না!
.
.
(ঘটনা নং-৪)
অনেক পড়ালেখা করে রুমি। ও বলে পড়ালেখা না করলে ভালো চাকরি জুটবে না। বিয়ের পর যদি স্বামী মারা যায় তখন তার কি হবে! ভবিষ্যতের কথা তো বলা যায় না!
হায় কি ভাগ্য বিয়ের ৫ বছর পর স্বামী মারা গেল!
.
.
নিয়ত কতটা পাওয়ারফুল দেখেন। উনাদের মত চরিত্ররা সবাই কিন্তু
আমাদের আশেপাশেই আছে।
.
আসাদ সাহেব সুন্দর বউ আর ঘর ভর্তি ফার্নিচার ঠিকই পেলো কিন্তু ঘরটাই পুড়ে গেলো। রফিক সাহেব টাকা জমা রাখেন কারণ রোগ হবে বলে। দেখুন উনি নিজেই নিজের রোগকে কিভাবে ডেকে আনছেন!
.
আফসানার বর-ই জুটলো না বরের টাকায় চলা তো দূরের কথা।
রুমি চাকরি করে কারণ তার স্বামী মারা যাবে বলে।
.
উনারা কাজটা করার আগে নিজেরাই কিভাবে নিজেদের গতিকে ঠিক করে দিচ্ছে! তাদের কাজটা কিন্তু তাদের নিয়ত অনুযায়ীই এগিয়ে যাচ্ছে। উনারা যারা যা চেয়েছিল সবাই তাই পেয়েছে!
.
.
.
হাজেরা (র:) ইব্রাহীম (আঃ) কে বললেন, মানুষ নেই ঘর নেই পানি নেই গাছ নেই এমন জায়গায় আপনার স্ত্রী পুত্রকে একা ফেলে কোথায় চলে যাচ্ছেন!
আল্লাহ কি আপনাকে এমন করতে বলেছেন? ঠিক আছে আপনি যান। তিনি আমাদের ধ্বংস করবেন না!
.
দেখুন কি তাওয়াক্কুল! এই হজ্জেও হাজীরা সাফা-মারওয়া পাহাড় দৌড়াবে, জমজম কূপের পানি খাবে শুধুমাত্র তার এই তাওয়াক্কুলের কারণে! সুবহানাল্লাহ!
.
.
মূসা (আঃ) নিজ শহর ত্যাগ করলেন। ভাবলেন না কোথায় থাকবেন কি খাবেন। বরং বলে যাচ্ছেন নিশ্চয় আল্লাহ পথ দেখাবেন। আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা'লা তাকে থাকার ব্যবস্থা করে তো দিলেনই সাথে জীবনসঙ্গীসহ ১০ বছর থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।
.
.
.
জানেন রফিক সাহেব কি বলেছিলো অপারেশনের পর, টাকাটা ব্যাংকে রেখেছিলাম বলেই আজকে অপারেশনের টাকাটা জুটলো না হলে বিছানায় থেকে মরতে হত। উনি উনার স্টেটমেন্ট হয়ত ভুলে গেছেন। উনি ব্যাংকে টাকা রেখেছিলেন এই বলে যে একসময় তার রোগ হবে!
.
.
আজকে আপনি আমি আমরা সবাই আল্লাহ কে ভয় করা বাদ দিয়ে ভয় করি রোগকে, ভয় করি টাকা না থাকাকে। আমরা কতটা নিচে চলে গেছি ভেবে দেখুন।
.
একবার এক ভাই বাড়ি বানাচ্ছেন, বলছিলেন যে উনি ভেন্টিলেটর দিচ্ছেন এই নিয়তে যে ফজরে দরজা জানালা বন্ধ থাকলে এই ভেন্টিলেটর দিয়ে ফজরের আজান শোনা যাবে। আমরা অনেকেই ভেন্টিলেটর লাগাই পিউর বাতাস পাবার জন্য, আর সেই ভাই তার এই নিয়তের কারণে হয়তো কত উচ্চতায় উঠে যাবেন। আর পিউর বাতাস তো উনি পাবেনই। এ কারণেই বলা হয়েছে, যে আখিরাতের নিয়ত করে দুনিয়া তার পায়ে লুটায়।
.
আপনি ছাত্র হলে পড়ালেখাটা আল্লাহর জন্য করুন, দাওয়াত এর নিয়তে করুন। চাকরিটা আল্লাহর জন্য করুন, হালাল রিজিকের জন্য করুন। মা-বাবা, বউ, বাচ্চার যত্ন নিন আল্লাহকে খুশি করতে। অন্য জন থেকে জুলুম করে না নিয়ে আল্লাহ থেকে খুঁজুন। নিয়ত করুন যেন আল্লাহ আপনাকে এতো বেশী দেন যাতে আপনি অন্য থেকে না খুঁজে উল্টো অন্যদের দু হাত ভরে দিতে পারেন। তাওয়াক্কুল রাখুন। ভাল ভাল নিয়ত করুন।
আপনি সবার থেকে সুখী হবেন। ইন-শা-আল্লাহ!
কবর যিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি, যিয়ারতের দুআ এবং এ ক্ষেত্রে বিদআত
▬▬▬🔸🔹🔸▬▬▬
🔰 কবর যিয়ারতের সুন্নত সম্মত নিয়ম হল:
◼ ১) মৃত্যু ও আখিরাতের কথা স্বরণ করার নিয়তে করব যিয়ারত করতে যাওয়া: আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে,
زَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ قَبْرَ أُمِّهِ فَبَكَى وَأَبْكَى مَنْ حَوْلَهُ ، ثُمَّ قَالَ : “ اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأَذِنَ لِي ، وَاسْتَأْذَنْتُهُ أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي فَزُورُوا الْقُبُورَ ، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করতে গিয়ে কাঁদলেন এবং তাঁর সাথে যে সাহাবীগণ ছিলেন তারাও কাঁদলেন। অতঃপর তিনি বললেন,“আমি আমার মায়ের মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম কিন্তু আমাকে সে অনুমতি প্রদান করা হয়নি। তবে আমি মায়ের কবর যিয়ারতের জন্যে আবেদন জানালে তিনি তা মঞ্জুর করেন। অতএব, তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা কবর যিয়ারত করলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। ”[105]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, أَلا فَزُورُوهَا ، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ
“সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারত কর, কেননা এতে আখিরাতের কথা স্বরণ হয়।”
◼ ২) কবর যিয়ারতের দুয়া পাঠ করা: বুরাইদা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীগণ কবর যিয়ারত করতে গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে এই দুয়াটি পড়তে বলতেন:
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلَاحِقُونَ أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ
“কবর গৃহের হে মুমিন-মুসলিম অধিবাসীগণ,আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ চাইলে আমরাও আপনাদের সাথে মিলিত হব। আমি আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা কামনা করছি। ”[106]
বিশেষ দ্রষ্টব্য: কবর যিয়ারতের দুয়া হিসেবে আমাদের সমাজে একটি দুয়া ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে। সেটি হল,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ
“হে কবরবাসীগণ,তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ তোমাদেরকে এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের আগে চলে গেছ। আমরা তোমাদের অনুগামী।” (তিরমিযী) কিন্তু এ হাদীসটি সনদগতভাবে দূর্বল-যেমনটি ইমাম আলবানী রাহ. যঈফ তিরমিযীতে উল্লেখ করেছেন। তাই সেটি না পড়ে পূর্বোল্লিখিত সহীহ মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে সহীহ সনদে যে দুয়াগুলো বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পড়ার চেষ্টা করা উচিৎ।
◼ ৩. মৃতদের গুনাহ-খাতা ও ভুলত্রুটি মোচনের জন্য আল্লাহর নিকট দুয়া করা: কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মৃতদের জন্য দুয়া শিখিয়েছেন। তিনি বলেন:
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ
“হে আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে এবং আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা করে দাও যারা ঈমানের সাথে আমাদের আগে (দুনিয়া) থেকে চলে গেছে। ”[107]
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন: وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ
“ক্ষমা প্রার্থনা কর নিজের জন্য এবং মুমিনদের জন্য। ”[108]
সুনানে আবূ দাঊদে বর্ণিত হয়েছে,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাফন ক্রিয়া শেষ করে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলতেন,
اسْتَغْفِرُوا لأَخِيكُمْ وَسَلُوا لَهُ التَّثْبِيتَ فَإِنَّهُ الآنَ يُسْأَلُ
“তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা চাও। দুয়া কর যেন সে স্থির থাকতে পারে। কারণ, তাকে এখনই প্রশ্ন করা হবে।”[109]
মোটকথা, মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন-হাদীসে বর্ণিত দুয়া সমূহ পাঠ করার পাশাপাশি নিজের ভাষায় যতখুশি দুআ করতে হবে। পিতামতার জন্য সন্তানের দুয়া সবচেয়ে বেশি কার্যকর ইনশাআল্লাহ।
🔰 মৃতদের জন্য হাত তুলে দুয়া করা:
দুয়া করার ক্ষেত্রে হাত তুলে দুয়া করা জায়েয রয়েছে। যেমন উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أَنَّه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَارَ القُبُوْرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَدَعَا لِأَهْلِهَا
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাকী গোরস্থান যিয়ারতে গিয়ে কবরবাসীদের জন্য দুহাত তুলে দুয়া করলেন।” [110]
🔰 মৃতদের জন্য সম্মিলিতভাবে দুয়া করার বিধান:
তবে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার ব্যাপারে দলীল নাই। তাই অনেক আলেম কবর যিয়ারত করার সময় একজন দুয়া করবে আর বাকি সবাই ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবে এভাবে সম্মিলিত দুয়াকে বিদয়াত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির [111]ফতোয়া হল, “দুয়া একটি ইবাদত। আর ইবাদত দলীলের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং আল্লাহর বিধানের বাইরে কারও জন্য ইবাদত করা জায়েজ নয়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এটি প্রমাণিত নয় যে, তিনি জানাযা শেষ করে সাহাবীদেরকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে দুয়া করেছেন। এ ক্ষেত্রে যে জিনিসটি প্রমাণিত তা হল, মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া সম্পন্ন হলে তিনি সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বলতেন, “তোমাদের ভাইকে এখনই প্রশ্ন করা হবে। অত:এব দুয়া কর যেন সে (প্রশ্নোত্তরের সময়) দৃঢ় থাকতে পারে।” তাহলে এ থেকে প্রমাণিত হল যে, জানাযার সালাত শেষ করে সম্মিলিতভাবে দুয়া করা জায়েয নয় এবং এটি একটি বিদয়াত।
----------------------
টিকা:
[105] সহীহ মুসলিম, হা/৯৭৬, মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন, অধ্যায়: কিতাবুল জানায়েয, অনুচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করা। হা/১৪৩০
[106] সহীহ মুসলিম,অধ্যায়ঃ গোরস্থানে প্রবেশকালে কী বলতে হয়? হাদীস নং ১৬২০
[107] সূরা হাশর: ৫৯
[108] সূরা মুহাম্মাদ: ৪৭
[109] সুনান আবূ দাঊদ,অধ্যায়ঃ কবরের নিকট মাইয়্যেতের জন্য দুয়া-এস্তিগফার করা। হাদীস নং ২৮০৪ ৯ম খণ্ড ২৪ পৃষ্ঠা,সহীহ আবু দাঊদ, আলবানী।
[110] সহীহ মুসলিম, জানাযা অধ্যায় হা/৯৭৪
[111] সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটি
✒✒✒✒✒✒✒
উত্তর প্রদানে:
আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, KSA
একশটি কবিরা গুনাহ ।
---------------------------------
🌀 কবিরা গুনাহ কাকে বলে?
কবিরা গুনাহ বলা হয় ঐ সকল বড় বড় পাপকর্ম সমূহকে যেগুলোতে নিন্মোক্ত কোন একটি বিষয় পাওয়া যাবে:
◉ যে সকল গুনাহের ব্যাপারে ইসলামি শরিয়তে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
◉ যে সকল গুনাহের ব্যাপারে দুনিয়াতে নির্ধারিত দণ্ড প্রয়োগের কথা রয়েছে।
◉ যে সকল গুনাহের ব্যাপারে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা রাগ করেন।
◉ যে সকল কাজে আল্লাহ তায়ালা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ফেরেশতা মণ্ডলী লানত দেন।
◉ যে কাজের ব্যাপারে বলা হয়েছে, যে এমনটি করবে সে মুসলমানদের দলভুক্ত নয়।
◉ কিংবা যে কাজের ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসূলের সাথে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
◉ সে সব বিষয়কে মুনাফেকির আলামত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
◉ যে কাজে ‘দ্বীন নাই’, ‘ঈমান নাই’ ইত্যাদি বলা হয়েছে।
◉ অথবা যে কাজকে আল্লাহ তায়ালা সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় করা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
🌀 কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার মর্যাদা:
১. মহান আল্লাহ বলেন:
إِن تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُم مُّدْخَلًا كَرِيمًا
"যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহ গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের (ছাট) গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেব এবং সম্মান জনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।” (সূরা নিসা: ৩১)
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
الصلوات الخمس . والجمعة إلى الجمعة . ورمضان إلى رمضان . مكفرات ما بينهن
إذا اجتنب الكبائر
“পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযান এতদুভয়ের মাঝে সংঘটিত সমস্ত পাপ রাশির জন্য কাফফারা স্বরূপ যায় যদি কবিরা গুনাহ সমূহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।” (মুসলিম)
🌀 একশটি কবিরা গুনাহ (বড় পাপ):
নিম্নে একশটি কবিরা গুনাহ (বড় পাপ) তুলে ধরা হল:
1. আল্লাহর সাথে শিরক করা
2. নামায পরিত্যাগ কর
3. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া
4. অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা
5. পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা
6. যাদু-টোনা করা
7. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা
8. জিহাদের ময়দান থেকে থেকে পলায়ন
9. সতী-সাধ্বী মু‘মিন নারীর প্রতি অপবাদ
10. রোযা না রাখা
11. যাকাত আদায় না করা
12. ক্ষমতা থাকা সত্যেও হজ্জ আদায় না করা
13. যাদুর বৈধতায় বিশ্বাস করা
14. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া
15. অহংকার করা
16. চুগলখোরি করা (ঝগড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে একজনের কথা আরেকজনের নিকট লাগোনো)
17. আত্মহত্যা করা
18. আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা
19. অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ ভক্ষণ করা
20. উপকার করে খোটা দান করা
21. মাদক বা নেশা দ্রব্য গ্রহণ করা।
22. মদ প্রস্তুত ও প্রচারে অংশ গ্রহণ করা।
23. জুয়া খেলা।
24. তকদির (ভাগ্য) অস্বীকার করা।
25. অদৃশ্যের খবর জানার দাবী করা।
26. গণকের কাছে ধর্না দেয়া বা গণকের কাছে অদৃশ্যের খবর জানতে চাওয়া।
27. পেশাব থেকে পবিত্র না থাকা।
28. রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করা।
29. মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা।
30. মিথ্যা কথা বলা।
31. মিথ্যা কসম খাওয়া।
32. মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা।
33. জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।
34. সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া।
35. মানুষের গোপন কথা চুপিসারে শোনার চেষ্টা করা।
36. হিল্লা তথা চুক্তি ভিত্তিক বিয়ে করা।
37. যার জন্যে হিলা করা হয়।
38. মানুষের বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা।
39. মৃতের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা।
40. মুসলিম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা।
41. কোন মুসলিমকে গালি দেয়া অথবা তার সাথে মারামারিতে লিপ্ত হওয়া।
42. খেলার ছলে কোন প্রাণীকে নিক্ষেপ যোগ্য অস্ত্রের লক্ষ্য বস্তু বানানো।
43. কোন অপরাধীকে আশ্রয় দান করা।
44. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবেহ করা।
45. ওজনে কম দেয়া।
46. ঝগড়া-বিবাদে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা।
47. ইসলামি আইনানুসারে বিচার বা শাসনকার্য পরিচালনা না করা।
48. জমিনের সীমানা পরিবর্তন করা বা পরের জমি জবর দখল করা।
49. গিবত তথা অসাক্ষাতে কারো দোষ চর্চা করা।
50. দাঁত চিকন করা।
51. সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে মুখমণ্ডলের চুল তুলে ফেলা বা চুল উঠিয়ে ভ্রু চিকন করা (ভ্রু প্লাগ করা)
52. মাথায় অতিরিক্ত/ চুল সংযোগ করা (পরচুলা ব্যবহার করা)
53. পুরুষের নারী বেশ ধারণ করা।
54. নারীর পুরুষ বেশ ধারণ করা।
55. বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কামনার দৃষ্টিতে তাকানো।
56. কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা।
57. পথিককে নিজের কাছে অতিরিক্ত পানি থাকার পরেও না দেয়া।
58. পুরুষের গোড়ালির নিচে ঝুলিয়ে পোশাক পরিধান করা।
59. মুসলিম শাসকের সাথে কৃত বয়াত বা আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করা।
60. ডাকাতি করা।
61. চুরি করা।
62. সুদ লেন-দেন করা, সুদ লেখা বা তাতে সাক্ষী থাকা।
63. ঘুষ লেন-দেন করা।
64. গনিমত (জিহাদের মাধ্যমে কাফেরদের নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পদ) বণ্টনের পূর্বে আত্মসাৎ করা।
65. স্ত্রীর পায়ু পথে যৌন ক্রিয়া করা।
66. জুলুম-অত্যাচার করা।
67. অস্ত্র দ্বারা ভয় দেখানো বা তা দ্বারা কাউকে ইঙ্গিত করা।
68. প্রতারণা বা ঠগবাজী করা।
69. রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎ আমল করা।
70. স্বর্ণ বা রৌপ্যের তৈরি পাত্র ব্যবহার করা।
71. পুরুষের রেশমি পোশাক এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য পরিধান করা।
72. সাহাবিদেরকে গালি দেয়া।
73. নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে গমন করা।
74. মনিবের নিকট থেকে কৃতদাসের পলায়ন।
75. ভ্রান্ত মতবাদ জাহেলি রীতিনীতি অথবা বিদআতের প্রতি আহবান করা।
76. পবিত্র মক্কা ও মদিনায় কোন অপকর্ম বা দুষ্কৃতি করা।
77. কোন দুষ্কৃতিকারীকে প্রশ্রয় দেয়া।
78. আল্লাহর ব্যাপারে অনধিকার চর্চা করা।
79. বিনা প্রয়োজনে তালাক চাওয়া।
80. যে নারীর প্রতি তার স্বামী অসন্তুষ্ট।
81. স্বামীর অবাধ্য হওয়া।
82. স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর অবদান অস্বীকার করা।
83. স্বামী-স্ত্রীর মিলনের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ করা।
84. স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করা।
85. বেশী বেশী অভিশাপ দেয়া।
86. বিশ্বাসঘাতকতা করা।
87. অঙ্গীকার পূরণ না করা।
88. আমানতের খিয়ানত করা।
89. শরীরে উল্কি অঙ্কন করা বা ট্যাটু করা।
90. ঋণ পরিশোধ না করা।
91. বদ মেজাজি ও এমন অহংকারী যে উপদেশ গ্রহণ করে না।
92. তাবিজ-কবজ, রিং, সুতা ইত্যাদি ঝুলানো।
93. পরীক্ষায় নকল করা।
94. ভেজাল পণ্য বিক্রয় করা।
95. ইচ্ছাকৃত ভাবে জেনে শুনে অন্যায় বিচার করা।
96. আল্লাহ বিধান ব্যতিরেকে বিচার-ফয়সালা করা।
97. পার্থিব উদ্দেশ্যে দীনী ইলম (দীনের জ্ঞান) অর্জন করা।
98. কোন ইলম (দীনের জ্ঞান) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জানা সত্যেও তা গোপন করা।
99. নিজের পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করা।
100. আল্লাহর রাস্তায় বাধা দেয়া।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন এবং কু প্রবৃত্তি ও শয়তানের প্ররোচনায় কোন গুনাহ করে ফেললে আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন।
অনুবাদ ও গ্রন্থনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্সে সেন্টার, সৌদি আরব ।
Social Plugin